নমুনায়নের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

 নমুনায়নের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো আলোচনা কর

উত্তর: গবেষণা মাত্রই তথ্যসংগ্রহ আবশ্যক। তথ্যসংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে গবেষণার জন্য দুটো পদ্ধতিতে সর্বাধিক তথ্যসংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে শুমারি একটি এবং অপরটি হলো নমুনায়ন। শুমারি পরিচালনার জন্য বাস্তবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর অন্যদিকে নমুনায়নে অনেক সমস্যা থাকে না। তাই সামাজিক গবেষণায় তথ্যসংগ্রহের জন্য নমুনায়ন বা Sampling অধিক গ্রহণযোগ্য এবং সুবিধাসম্মত উপায়।

নমুনায়নের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

নমুনায়নের বিভিন্ন সুবিধাবলি

১. মিতব্যয়ী পদ্ধতি: শুমারি অপেক্ষা নমুনায়ন একটি মিতব্যয়ী পদ্ধতি। কারণ শুমারিতে প্রতিটি একক হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের একটি নির্বাচিত অংশ হতে তথ্যসংগ্রহ করা হয় বলে এটি কম ব্যয়বহুল পদ্ধতি। এর ফলে আর্থিক মিতব্যয়িতা সে নমুনায়নের বৈশিষ্ট্য তা সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে দাঁড়ায়।

২. স্বল্পসময়: শুমারিগুলোতে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি এককের নিকট পৌঁছাতে হয় বলে, এতে সময় বেশি লাগে। আবার সমগ্রকের একটি অংশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় বলে কম সময়ে এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।

৩. দ্রুত ফলাফল: এমন অনেক সামাজিক গবেষণা আছে যেগুলো তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হয়। তখন শুমারি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের চেয়ে নমুনায়ন পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ করে সঠিকভাবে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ কর। সম্ভবপর হয়ে উঠে।

৪. কম পরিশ্রম: শুমারি পদ্ধতিতে অধিক তথ্য সংগ্রহের কারণে শ্রমের অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক থাকে, তবে নমুনা জরিপে তুলনামূলক অল্পসময় এবং কম পরিশ্রমে অতি সহজেই সুনির্দিষ্ট তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব।

৫. গবেষণা মূল্যায়ন: সামাজিক গবেষণায় অধিকাংশ সময়েই গবেষণার মূল্যায়ন বার বার করা হয়ে থাকে। তাই শুমারি পদ্ধতিতে মূল্যায়নের জন্য অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। অপরদিকে, নমুনা জরিপে খুব সহজেই গবেষণার মূল্যায়ন সম্ভব।

৬. ব্যাপক ও সঠিক তথ্য: নমুনায়ন বাছাইকৃত বা নির্বাচিত এককগুলোর তথ্যানি মাঠ পর্যায় হাত সংগৃহীত হয়। ফলে প্রাপ্ত তথ্যাদির সূক্ষ বিশ্লেষণ ও কার্যকরি ফলাফল লাভ করা যায়। কিন্তু শুমারির ক্ষেত্রে এক ব্যাপক তথ্যাদির যুদ্ধ বিশ্লেষণ সম্ভব হয় না।

৭. সহজ পরিচালনা পদ্ধতি: নমুনায়ন প্রক্রিয়ার দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাপ্ত লোকের উপস্থিতিতে সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় ঘটিয়ে খুব সহজেই গবেষণা পরিচালনা করে দ্রুত নির্ভরশীল ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু শুমারি জারিপ পদ্ধতি পরিচালনা বেশ দুরূহ, সময়সাপেক্ষে ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্য সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রাহ নমুনায়ন আর্থিক সুবিধাজনক পদ্ধতি।

৮. বিজ্ঞানভিত্তিক: নমুনা জরিপে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য নানাবিধ নমুনায়ন কৌশল ব্যবহৃত হয়। কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে এবং অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু শুমারি জরিপের তেমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি নেই।


নমুনায়নের অসুবিধাসমূহ

১. প্রতিনিধিত্বের সমস্যা: নমুনায়নের সমস্যাগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর সমস্যা হলো প্রতিনিধিত্বের সমস্যা। এই সমস্যা হলো সমগ্রক হতে একক অর্থাৎ গবেষণার বস্তু হতে যেসব একক বাছাই করা হয় নমুনা নিয়ে তথ্য গ্রহণের জন্য সেই সকল একককে প্রতিনিধিত্বশীল একক বলে। এখন এই প্রতিনিধিত্বশীল একক যদি ভুল বাছাই হয়, তবে গবেষণার উপাদানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।

২. নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা: নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা নমুনায়নের অন্যতম প্রধান সমস্যা। গবেষণায় যেসব ব্যক্তি বা বস্তুকে নমুনা হিসেবে ধরা হয় তার উপর নির্ভর করে গবেষণার ফলাফল। কিন্তু অনেক সময় নির্বাচিত নমুনাগুলোকে যথাসময়ে পাওয়া যায় না। ফলে গবেষণাকর্মে ব্যাপক সমস্যা হয় এমনকি গবেষণার ফলাফল পর্যন্ত ভুল আসতে পারে।

৩. দক্ষ গবেষকের সমস্যা: যেকোনো গবেষণাকে বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবভিত্তিক করে তোলার জন্য প্রয়োজন দক্ষ অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান গবেষক বা গবেষণাকর্মীর। কেননা মঞ্চ গবেষক বা গবেষণাকর্মীই পারে সঠিক উপযুক্ত নমুনা সংগ্রহ করতে। কিন্তু বাস্তবে এরকম দক্ষকর্মীর অভাব প্রকট। এর ফলে কম দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির দ্বারা গবেষণা পরিচাল করা হয়। ফলশ্রুতিতে গবেষণার ফল সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ হয় না।

৪. নমুনার বৈচিত্র্য: সমগ্রকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি এককস্থ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট। ধারণ করে। কাজেই প্রতিটি একই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নমুনায়ন পদ্ধড়িতে একটি নির্দিষ্ট অংশকে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে কেবল নির্বাচিত অংশের বৈশিষ্ট্যগুলো নমুনা হিসেবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৃহৎ বা একটা অংশ বাদ পড়ে যায়।

৫. বাস্তবতা বর্জিত: যনি বাছাইকৃত প্রতিনিধিত্বশীল এককে ধর্মের বা বৈশিষ্ট্যের সাথে সমগ্রকের ধর্মের না বৈশিষ্টোয় মিল না থাকে তাহলে গবেষণার ফলাফল বাস্তবতা বর্জিত হবে।

৬. পক্ষপাতিত্ব সমস্যা: গবেষক বা তথ্য সংগ্রাহক অনেক সময় মানবিক বা যেকোনো কারণেই নিজের পরিচিত বা বিশেষ গ্রুপের সাথে একাত্ব হয়ে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে ফলে নিরপেক্ষ ফল হয় না। এর ফলে গবেষণা কর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

৭. সমগোত্রীর এককের সমস্যা: নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করলে শুধু সেটা সমগোত্রীর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রযোগ্য হবে। কিন্তু সমগ্রকের প্রতিটি উপাদান যদি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয় তাহলে নমুনায়ন দ্বারা তথ্যসংগ্রহ সম্ভব নয়। সমগোত্রীয় এককের উপস্থিতি ছাড়া নমুনা জরিপ সম্ভব নয়।

উপসংহার: নমুনায়নের ভূমিকা গবেষণা কাজে অপরিহার্য। উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে নমুনায়নের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য নমুনায়ন পদ্ধতির সুবিধাই বেশি।

No comments:

Post a Comment